facts & history of tata nano
History
একটা সময় ছিল যখন ভারতের প্রতিটি সংবাদপত্র বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা গাড়ির বিজ্ঞাপনে পূর্ণ ছিল।
"আজ, আমি গর্ব করে বলতে পারি যে আমার গাড়িটি বাজারে সবচেয়ে সস্তা" বলেছিলেন রতন টাটা।
চার চাকার গাড়ি যার দাম ১ লাখ টাকা! রতন টাটার স্বপ্নের প্রকল্প দেখে চমকে গিয়েছিল গোটা বিশ্ব। সর্বভারতীয় গাড়ি নির্মাতা ব্র্যান্ড টাটা মোটরস এমন একটি ফোর-হুইলার নিয়ে এসেছে, যা একটি বাইকের চেয়ে সস্তা ! এবং বিশেষভাবে ভারতীয়দের চাহিদা মেটাতে ডিজাইন করা হয়েছে৷
তাদের ন্যানো ভারতীয় মোটরগাড়ি শিল্পে একটি মাইলফলক হয়ে উঠেছিল ।
ন্যানো মধ্যবিত্তদের কথা মাথায় রেখে ডিজাইন করা হয়েছিল - চার চাকার গাড়ি এখন সবার নাগালের মধ্যে।
তবে এতো চাহিদা বা ট্রেন্ড সত্ত্বেও টাটা ন্যানো সফল হতে পারিনি। বাস্তবতার মাটিতে এসে, এই গাড়িটি দ্রুত একটি উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছিল।
ফলে শেষ পর্যন্ত উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয় ।
সর্বোপরি, যে কথা ভারতীয়রা কখনোই ভুলবে না, "ন্যানো-এর সাথে জমি অধিগ্রহণের বিতর্ক", যা পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট যুগের পতন ঘটিয়ে ছিল, এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা ব্যানার্জিকে নির্বাচন করেছিল সাধারণ মানুষ।
দুঃখের বিষয় টাটা ন্যানোর মামলা এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
সময়ের সাথে সাথে জমি অধিগ্রহণ বিতর্ক কোম্পানির ভালো-মন্দের চেয়ে টাটা কোম্পানির গাড়ি নিয়েই বেশি হয়েছে।
এই গাড়ি তৈরির জন্য প্রথমে সিঙ্গুরকে বেছে নেয় টাটা মোটরস। যাইহোক, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, ন্যানো কারখানাটি পরে সরাসরি গুজরাটের সানন্দায় স্থানান্তরিত হয়।
টাটা সন্সের এমিরেটসের চেয়ারম্যান রতন টাটা পরে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেন।
এই গাড়ির একটি ইলেকট্রিক সংস্করণ লঞ্চ হতে চলেছে বলে খবর রয়েছে। টাটা ন্যানো ইলেকট্রিক মডেলের সঙ্গে রতন টাটার একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।
রতন টাটা কেন ন্যানো গাড়ি নিয়ে এলেন?
রতন টাটা ইনস্টাগ্রামে লিখেছেন যে তিনি ভারতীয়দের একটি সস্তা গাড়ি দিতে "মরিয়া" ছিলেন, কারণ তিনি বিশ্বাস করেন যে এটি দেশের অর্থনীতির উন্নতিতে সহায়তা করবে।
তিনি বলেছিলেন যে "একলাখি ন্যানোর" চিন্তাধারা সত্যিই একজন ভারতীয় হিসাবে তার নিজের অভিজ্ঞতার প্রতিফলন, এবং তিনি একটি সফল কম্পানির সিইও হিসেবে ভারতের সাধারণ নাগরিকের প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য গুরুত্ব সহকারে দেখার চেষ্টা করেন।
ন্যানো আবিস্কারের কাহিনি
টাটা মোটরস কীভাবে তাদের মিড-রেঞ্জ গাড়ি এত কম খরচে তৈরি করল?
রতন টাটা নিজেই আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তিনি তার ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে টাটা ন্যানো সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অজানা গল্প শেয়ার করেছেন।
তিনি একটি আবেগপূর্ণ পোস্ট শেয়ার করেছেন যেখানে তিনি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কীভাবে এই গাড়িটি তৈরি করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন এবং কীভাবে তিনি তার স্বদেশীদের প্রতি তার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছিলেন।
টাটা ন্যানো-এর পুরো প্রকল্পটির সূচনা 2003 সালের নভেম্বরে শুরু হয়েছিল। সেই দিন রতন টাটা একটি পরিবারের চার সদস্যকে একটি স্কুটারে বসে রাস্তা দিয়ে যেতে দেখেছিলেন। বাচ্চারা দেখে মনে হল বাবা-মায়ের মাঝে স্যান্ডউইচ হয়ে যাবে।
তখনই ভারতীয়দের জন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন রতন টাটা। কিছু গবেষণা করার পর, রতন টাটা বুঝতে পারলেন যে এই সমস্যার একটাই সমাধান আছে, আর সেটা হল একটি সস্তা ফোর-হুইলার।
তাঁর কথায়, আমি সমস্ত ভারতীয় পরিবারকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম যারা সারাক্ষণ স্কুটারে থাকে।
কখনও কখনও, একটি স্কুটারে থাকা একটি শিশু বৃষ্টির মধ্যে একটি পিচ্ছিল রাস্তায় বাবা মায়ের মধ্যে পুরোপুরি চেপে থাকে।
তারপর থেকে আমি স্কুল অফ আর্কিটেকচারে বেশি করে সময় কাটাতে শুরু করি, এবং আমার মাথায় সারাক্ষণ কিভাবে আমি ভারতীয় পরিবারকে সাহায্য করতে পারি এটাই ঘুরতে থাকে ।
আমি সবসময় চাই তারা আরামদায়ক ভ্রমণ করুক । আমি একটা ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি। ঠিক সেই সময় ন্যানোর একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করা হয়।
ন্যানোর ফ্যাক্টস !
প্রথমে ন্যানোর ডিজাইনে কোনো জানালা বা দরজা ছিল না। একটি মাত্র কার্ট ছিল। কিন্তু তারপরে সিদ্ধান্ত হয়, এটি একটি সম্পূর্ণ গাড়ির মতো ডিজাইন করা উচিত তাহলে এটি আরও আকর্ষণীয় হবে।
64 বছর বয়সী রতন টাটার কথায়, "ন্যানো দেশের সাধারণ মানুষের গাড়ি।"
এবং এটি আমার স্বপ্নের ন্যানোতে পরিণত হয়েছিল।
টাটা ন্যানোর বৈশিষ্ট্য কি কি ছিল ?
Tata Nano 624cc SSC পেট্রোল রিয়ার ইঞ্জিন এবং পিছনের চাকা গাড়ি প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি। ম্যানুয়াল গিয়ারবক্সের কারণে এটি ছিল একটি অন্যতম নিরাপদ গাড়ি।
গাড়িটির মাইলেজ প্রতি লিটারে 25 কিলোমিটার, এবং যদি শহরে ড্রাইভ করা হয়, গাড়িটির মাইলেজ হবে 15 থেকে 16 কিলোমিটার প্রতি লিটার।
টাটা ন্যানো এত সস্তা কিভাবে ?
যখন থেকে টাটা ন্যানো প্রথম বাজারে এসেছে, তখন থেকেই মানুষ ভাবছে রতন টাটা কীভাবে মাত্র 1 লাখ টাকায় এই গাড়িটি বানাতে পেরেছেন?
উত্তর হল ন্যানো গাড়িটি বানানোর জন্য টাটা মোটরস ব্যাপকভাবে 'কস্ট কাট' করেছে। সাধারণত যে কোনো গাড়িতে নির্মাতা কোম্পানি 3 থেকে 8 শতাংশের মতো লাভ করে , সঙ্গে ডিলারের অতিরিক্ত 4-5 শতাংশ লাভ থাকে । মোট প্রায় 13% থেকে 20% লাভ থাকে।
প্রথমত, ন্যানোর ডিজাইনে থেকে একটি গাড়ি হিসেবে উপস্থাপন করা টাটা মোটরসের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল।
শুধু প্রফিট কমিয়েই ন্যানোর দাম কমানো সম্ভব হয় নি। আরো অনেক কস্ট কাট করতে হয়েছিল টাটা মোটরস কে।
কেন অসফল ?
- প্রথমে গাড়ির থেকে একটি উইন্ডস্ক্রিন সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
- তারপর গাড়ির নিরাপত্তার সঙ্গে আপোস করে ন্যানো গাড়ি থেকে এয়ারব্যাগ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
- সঙ্গে গাড়ির টায়ার সঠিক মাপের ছিল না।
- এই গাড়ির পেট্রোল ট্যাঙ্কটিরও কিছু সমস্যা ছিল।
- আর সব থেকে বড় কথা এই গাড়িটি তৈরি হওয়ার পর ন্যানোর দাম এক লাখের থেকে অনেকটাই বেশি হয়ে গেছিল। ন্যানো তৈরি হওয়ার পর এর দাম প্রায় এক লাখ ষাট হাজার টাকা মতো হয়ে গেছিল।
আর এই কারণই ন্যানো নিজের কথা রাখতে পারেনি। ও ক্রেতাদের কাছে ডাহা ফেল করেছে।
সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে ন্যানোর একটি ইলেকট্রিক ভার্সান টাটা মোটরস লঞ্চ করতে পারে খুব শীঘ্রই। কেমন হবে সেই গাড়ি , কি কি থাকছে ইত্যাদি জানতে আপনি এই পেজটি বুক মার্ক করে রাখতে পারেন। আমরা এখানেই আপডেট করে দেবো।
দাঁতে ব্যাথা ? ও দাঁত সাদা করার 10টি খুব সহজ ঘরোয়া উপায় ! জানতে ক্লিক করুন
কেমন লাগলো আপনার আমাদের প্রতিবেদন ? কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। আমাদের facebook page ফলো করতে ভুলবেন না। বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করুন, যদি আপনার ভালো লেগে থাকে। আর যেকোনো নতুন পোস্ট বা আর্টিকেল এর ইমেইল নোটিফিকেশন পাওয়ার জন্য আপনি এখানে ক্লিক করতে পারেন। ক্লিক করার পর আপনার নাম ও ইমেইল দিয়ে সাবমিট করে দেবেন।