চা একটি অন্যতম জনপ্রিয় পানীয়। হোক সেটা পাড়ার বা রাস্তা ঘাটে কিংবা বন্ধুমহলে বা ঘরোয়া আড্ডায়। সারা দিনের ক্লান্তি দূর করতে চায়ের জুড়ি মেলা ভার ।কিন্তু চা যদি আপনি পানই করবেন, তবে গ্রিন টি কেন নয়?
এমনি এমনি বলছি না, গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা বলতে গেলে সব দিক থেকেই শরীরকে চাঙা আর তরতাজা রাখে। গ্রিন টি রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতাও বাড়ায়, ক্যানসার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে , উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদিও নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে বলে জানা গেছে । এ ছাড়া ক্যাটেচিন নামের একটি উপাদান থাকে গ্রিনটিতে, যা ভিটামিন-ই এবং সির থেকেও বেশি শক্তিশালী, যা শরীরে একাধিক উপকার করে।
তাছাড়া গ্রিন টি কিন্তু ওজন কমাতেও খুবই কার্যকরী। গ্রিন টি হজমপ্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। গ্রিনটিতে উপস্থিত ক্যাটেচিন পেটের মেদ ঝরাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই অতিরিক্ত ওজন কমাতে নিয়মিত গ্রিনটি পান করা উচিত । ইদানীং ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেকেই গ্রিনটিকে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখতে পছন্দ করছেন।
তবে একজন সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের ওজন বাড়ে প্রধানত প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার গ্রহণ ও পরিশ্রমহীন জীবন-যাপন করার জন্য। আর ওজন নিয়ন্ত্রণ বা কমে ঠিক তার উল্টো অর্থাৎ প্রয়োজনীয় বা তার কম ক্যালরি গ্রহণ ও ব্যায়াম করলে।
যাইহোক, গ্রিন টি কিন্তু সব ক্ষেত্রেই আপনাকে ওজন কমাতে সাহায্য করবে। তবে এক দিনে ২-৩ কাপের বেশি গ্রিনটি পান করা থেকে বিরত থাকুন এবং এর সঙ্গে গুঁড়া দুধ কিংবা চিনি মেশানোটাও আপনাকে বাদ দিতে হবে।
এক কাপ কফির থেকে এক কাপ গ্রিন টি পান করা অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর। কফির তুলনায় গ্রিনটিতে ক্যাফেইনের মাত্রা কম থাকে, তবে তা শরীরের সতেজতার জন্য যথেষ্ট। আবার বেশি ক্যাফেইন অনেক সময় আপনার আসক্তির কারন হতে পারে। অন্যদিকে, গ্রিনটির মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন A, B, B5, C, D, E, এইচ সেলেনিয়াম, ক্রোমিয়াম, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ ও ওই যে বললাম সামান্য পরিমাণে ক্যাফেইন।
আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে তাপ উৎপন্ন হয়, যা আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখে। আর গ্রিনটি পান করলে শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে থাকে। তাপ বাড়াতে হলে শরীরের ক্যালরি খরচ করতে হয়। আর ক্যালরি পোড়া মানেই তো ওজন আপনার কমতেই হবে। আর এইভাবে গ্রিন টি সাহায্য করে আপনার অতিরিক্ত মেদ কমাতে । গ্রিন টি শরীরের বিপাকীয় ক্ষমতাকেও বাড়ায়। এর মধ্যে থাকা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান এই কাজে মুখ্য ভূমিকা রাখে। গ্রিন টি একধরনের হরমোনের পরিমাণ শরীরে বাড়িয়ে তোলে, যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
সাধারণ যাঁরা গ্রিন টি পান করেন এবং নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁদের দ্রুত চর্বি ঝরে। আর যাঁরা ব্যায়াম করেন, অথচ গ্রিন টি পান করেন না, তাঁরা এই উপকার থেকে বঞ্চিত হন। আবার যাঁরা গ্রিন টি পান করেন, তবে ব্যায়াম ট্যাম করেন না, তাদেরও মেদ কমে কিন্তু তা খুবই কম।
গ্রিন টি পরোক্ষভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অল্প পরিমাণে মানে দৈনিক দুই কাপ পান করলেও সপ্তাহ বা মাস শেষে তা বড় পরিমাণই হয়। তবে যদি আপনি ব্যায়াম না করে গ্রিন টি পান করেন, এটি তেমন ভালো কাজে দেয় না। ব্যায়াম এবং গ্রিন টি পান একসঙ্গে চালিয়ে গেলে ওজন খুব দ্রুত গতিতে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ।
কখন পান করবেন গ্রিন টি?
সকালের খাবারের পরসকালের ব্রেকফাস্ট এমন হওয়া উচিত, যেন সারা দিন শরীরের সমস্ত প্রয়োজনীয় পৌষ্টিক উপাদান সেখান থেকেই শরীর পেতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই রোগা হওয়ার জন্য সকালে খাবার খাওয়ার অভ্যাসকে পরিবর্তন করতে চান কিন্তু সেটা একেবারেই উচিত নয়। খালি পেটে গ্রিন টি খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হতে পারে। সুতরাং সকালের ব্রেকফাস্টে স্বাস্থ্যকর কোনো খাবার খেতে হবে এবং এরপর গ্রিন টি পান করবেন।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ২ ঘণ্টা আগে
রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে গ্রিন টি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। তবে অনেক সময় তা ঘুম নষ্ট করতে পারে, এ জন্য ঘুমানোর দুই ঘণ্টা আগেই চা পান করতে হবে। এরপরও যদি ঘুমের সমস্যা হয়, তবে তা বাদ দিতে হবে এবং দিনের অন্য সময় তা পান করতে হবে।
ব্যায়াম করার আগে
এটা খুবই জরুরী। ব্যায়াম করার আধা ঘণ্টা আগে গ্রিন টি পান করলে যেমন শরীরের মেটাবলিজম বাড়বে, তেমনি বাড়বে আপনার কর্মদক্ষতা। ফলে ওজন এবং মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
খাবার খাওয়ার পরে বা আগে কখন
অনেকেই খাবার খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করেন। খাবার খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গ্রিন টি পান করা উচিত নয়। খাবার খাওয়ার কমপক্ষে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পরে অথবা আগে গ্রিন টি পান করুন।
কখন গ্রিন টি পান করবেন না
- সকালে খালি পেটে গ্রিন টি পান করবেন না।
- খাওয়ার পরপরই গ্রিন টি পান করবেন না।
- ঘুমের সমস্যা এড়িয়ে যেতে গভীর রাতে গ্রিন টি পান করবেন না।